যুক্তরাজ্যের দম্পতির মেনিনজাইটিসের বিরুদ্ধে লড়াই

প্রকাশঃ এপ্রিল ২৫, ২০১৬ সময়ঃ ১১:২৯ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১১:২৯ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ

112BB95300000514-0-image-a-12_1461535902753

শুধু ঈশ্বর জানেন নীল এবং জেনি বার্ডেট কোথা থেকে শক্তি পাচ্ছেন। মাত্র দু মাস হলো তারা তাদের দু বছরের কন্যাশিশু ফায়েকে অন্ধকার কবরে শুইয়ে দিয়ে এসেছেন, তারপর ইন্টারনেটে পোস্ট করেছেন মেনিনজাইটিসের ভয়াবহতায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাওয়া ফায়ের ছোট্ট শরীরের ছবি।

নীল এবং জেনি বলেন, এ ঘটনায় তাদের পৃথিবী চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়েছে। কিন্তু তাদের চোখে কোন অশ্রু নেই, কোন রাগ নেই তাদের মাঝে। শুধু পরিশীলিত প্রতিজ্ঞা রয়েছে মনে। কোন শিশুকেই যেন ফায়ের মতো যন্ত্রণা ভোগ করতে না হয়।

দীর্ঘ ১১ দিন লড়াই করেছে ফায়ে ভয়ংকর মেনিনজাইটিস বি এর সঙ্গে এবং ভোগ করেছে নারকীয় যন্ত্রণা। আর আমরা জানি, এই পরিস্থিতি এড়ানো যেত সাধারণ একটি টিকার সাহায্যে।

দূর্ভাগ্যজনকভাবে এই টিকা নেওয়ার বয়স ছিল না ফায়ে বার্ডেটের। এনএইচএসে যে টিকার ব্যবস্থা ছিল তা ২ থেকে ৫ মাস বয়সী শিশুদের জন্য। যাই হোক, ফায়ের মৃত্যুর ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তার বাব-মা ফায়ের ভয়ংকর ছবিগুলো পোস্ট করার সিদ্ধান্ত নেন সকল শিশুর জন্য টিকার ব্যবস্থা নিতে একটি ক্যাম্পেইন সমর্থন করার জন্য।

কিন্তু গত মাসে যুক্তরাজ্য সরকার এই বিষয়ে তাদের বক্তব্য দেয় এই বলে যে, এই বিষয়ে প্রোগ্রাম প্রসারিত করাটা এনএইচএসের জন্য খরচসাপেক্ষ হবে।

নীল বার্ডেট বলেন, এই খরচের কথাটি আমাকে শীতল করে দিয়েছে। তারা কীভাবে একজন শিশুর জীবনের মূল্য টাকার অংকে নির্ধারণ করতে পারে। তারা আমাদের ইউরোপে থাকার কথা বলতে ৯ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে লিফলেট ছাপায়। অথচ তারা আমাদের শিশুদের ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য ৯ মিলিয়ন ইউরো খরচ করবে না।

Shot At the Hilton Hotel In Maidstone. Portraits of Jenny and Niel.

যেদিন ফায়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে সেদিন সকালে ফায়েকে নিয়ে জেনি ফায়ের বন্ধুর বাসায় বেড়াতে গিয়েছিল। তখন সে সম্পূর্ণ সুস্থ্য ছিল। কিন্তু দুপুরের হালকা ঘুম থেকে ওঠার পর ফায়ে বলে, তার পায়ে ব্যথা। এরপর সে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং তার গায়ের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে।

জেনি নীলকে ফোন করেন এবং এক সময়কার প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা, নিজের মাকে ফোন করেন। জেনি ও তার মা ফায়েকে নিয়ে মেইডস্টোন হাসপাতালে যান কিন্তু সেখানে ফায়েকে কোন দেওয়া তো দূরের কথা, ফায়ের অসুখ চিহ্নিত করাও সম্ভব হয়নি। বার্ডেট দম্পতি জানেন, যদি এন্টিবায়োটিকের সুব্যবস্থা থাকতো হাসপাতালে, তাদের মেয়ের জীবন হয়তো রক্ষা পেত।

বিকাল সোয়া পাঁচটার দিকে ফায়েকে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করে দেওয়া হয়। বার্ডেট দম্পত্তি বুঝতে পারছিলেন যে তাদের মেয়ের কোন একটা ভয়ংকর সমস্যা হয়েছে কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ফায়ের ইউরিন টেস্টের রেজাল্ট পাওয়ার আগে কিছু বলা যাবে না, যা পেতে ৪৮ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে।

ফায়েকে বাড়িতে নিয়ে আসার পর সাড়ে নয়টার দিকে সে ঘুমিয়ে পড়ে। নীল নিচলায় চেয়ারে ঘুমাতে যায় এবং পরবর্তীতে তার ঘুম ভাঙ্গে জেনির ডাকে। জেনি জানায় ফায়ের মাথায় র‍্যাশ উঠেছে। নীল কখনোই এমন র‍্যাশ দেখেনি। মনে হচ্ছিল যেন চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ফায়েকে আবার হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার জানায়, তার মেনিনজোকোকাল সেপসিস হয়েছে। জেনি ও নীল ভেবেছিল মেনিনজাইটিস। কিন্তু ফায়ের মেনিনজাইটিসের ভ্যাকসিন দেওয়া ছিল। এটি ছিল মেনিজাইটিসের অন্য একটি ধরণ। ফায়েকে পরবর্তীতে লন্ডনের এভালিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালের কনসালটেন্ট জানান, ফায়ের মাত্র ১% সুযোগ আছে বেঁচে থাকার। তবে তার বাইপাস অপারেশন করা হলে সেটা ২০% বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু দুপুর ৩ টার দিকে ফায়ের শরীর আবার লড়াই করতে শুরু করায় ডাক্তাররা বাইপাস না করার সিদ্ধান্ত নেন। ৭ দিন ফায়ে লড়াই করে এবং এই ৭ দিন বাব-মার আশা বেঁচে থাকে।

সে সময়টাতেই জেনি এবং নীল মেনিনজাইটিসের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করে। এবং জানতে পারে মেনিনজাইটিসের ডব্লিউ, এ, ওয়াই, এ সি এবং এ বি টাইপ রয়েছে।

কিন্তু ১১ ফেব্রুয়ারি যেন সব আশা শেষ হয়ে আসে। হাসপাতালের স্টাফরা ফায়ের ভেন্টিলেটর খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ফায়েকে প্রাকৃতিকভাবে মৃত্যুর সুযোগ দিতে চায়। ফায়ের বাব-মাকেও তারা এ কথা জানায়। তারা নীল ও জেনিকে বলেন, সে ছিল খুব ভালো মেয়ে এবং শক্তিশালী মনের। কিন্তু তার লড়াই বন্ধ করে দেওয়া দরকার এবং তার দাদা তার জন্য অপেক্ষা করছেন।

Shot At the Hilton Hotel In Maidstone. Portraits of Jenny and Niel.

ফায়ের মৃত্যুর রাতটির বর্ণনা দিতে গিয়ে জেনি বলেন, “আমরা সকল লাইট বন্ধ করে দিয়েছিলাম এবং তার প্রিয় সঙ্গীত বাজাচ্ছিলাম। মাত্র আধা ঘন্টা হয়েছিল যে আমরা ঘরটি অন্ধকার এবং নীরব করেছিলাম – ঠিক যেন সেই সময়টার মতো যখন ফায়ে ঘুমাতে যেত। আর ফায়ে ঘুমাতে ভালোবাসতো।”
“আমি ফায়ের এক হাত ধরেছিলাম এবং জেনি আরেক হাত। আমরা তাকে চুমো দিয়েছিলাম। এবং আমরা অনুভব করলাম সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।” নীল বলছিলেন।

জেনি বলেন, “যদি সরকারের শিশুদের সুরক্ষার ব্যাপারে সদিচ্ছা থাকে তবে অবশ্যই তারা সেটা করবে। আর তারা যদি কিছুই না করে এবং বলে যে মেনিনজাইটিসের ভ্যাকসিন জরুরী নয়, তাহলে তারা বিস্মিত হবে এটা দেখে যে আমি কত উচ্চ স্বরে চিৎকার করতে পারি।
আমরা এমপিদের এমপি বানিয়েছি। তাদের উচিত মানুষের কথা শোনা। মেনিনজাইটিস প্রত্যেক পরিবারের ভয়। আর কোন শিশুকে মেনিজাইটিসে মরতে দেবেন না।”

মেনিনজাইটিসের লক্ষণ জেনে রাখুন। এতে আপনি ও আপনার শিশুর জীবন রক্ষা পেতে পারে।

মেনিনজাইটিসের লক্ষণগুলো হলো –
১। গায়ের তাপমাত্রা অত্যধিক বেড়ে যাওয়া। যা ৯৯.৫ ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যাবে।
২। বমি এবং মাথাব্যথা।
৩। ব্রণ বা আঁচিল দ্বারা আবৃত র‍্যাশ যার উপর দিয়ে গ্লাস ঘষলেও হালকা হয় না।
৪। ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া।
৫। উজ্জ্বল আলোতে অস্বস্তি।
৬। ক্লান্তি ও তন্দ্রালু ভাব।

বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আরো যেসব লক্ষণ দেখা যেতে পারে –
১। দুধ খেতে ও কোলে উঠতে চায় না।
২। মাথায় স্ফীতিশীল দাগ পড়া।
৩। শিথিল ভাব ও সাড়া না দেওয়া।
৪। উচ্চ স্বরে কান্না করা এবং শরীর শক্ত হয়ে যাওয়া।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G